চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন—আপনি একটি যন্ত্রের সামনে বসে আছেন, আর সে আপনার কথা শুনছে, বুঝছে, এবং উত্তর দিচ্ছে। আপনি একটি গল্প বললেন, সে সেটিকে লিখে দিল, গানে রূপ দিলো, এমনকি ভিডিও বানিয়ে দিল!
এটা কোনো জাদু নয়—এটাই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence (AI)। আজ আমরা জানবো AI এর জন্ম, বিকাশ এবং ভবিষ্যৎ—একটি সাহসী কল্পনার বাস্তব হওয়ার ইতিহাস।
AI এর ইতিহাস শুরু হয় ১৯৫০ সালে, এক প্রশ্ন দিয়ে—“Can machines think?”
এই প্রশ্ন করেছিলেন ব্রিটিশ গণিতবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী Alan Turing। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি এমন একটি মেশিন তৈরি করেছিলেন যা নাৎসি বাহিনীর গোপন Enigma কোড ভেঙে যুদ্ধ জয়কে ত্বরান্বিত করেছিল।
এরপর Turing ভাবলেন—যদি মেশিন গাণিতিক হিসাব ছাড়াও চিন্তা করতে পারে?
এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় Turing Test—একটি পরীক্ষণ পদ্ধতি যার মাধ্যমে বোঝা যায়, একটি মেশিন কি সত্যি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে?
দুর্ভাগ্যবশত, Turing-এর জীবন ছিল করুণ। সমাজ তার যৌন পরিচয়কে মেনে নেয়নি। আদালত, কারাবাস, এবং অত্যাচারের পরিণতিতে ১৯৫৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন।
তবুও, তাঁর সেই প্রশ্ন আজও প্রযুক্তির মূল প্রেরণা।
Turing মারা যাওয়ার দুই বছর পর, ১৯৫৬ সালে Dartmouth College, USA–তে অনুষ্ঠিত হয় একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন।
এখানে বিজ্ঞানীরা বললেন:
“আমরা এমন একটি মেশিন বানাবো, যেটা মানুষের মতো চিন্তা করবে।”
এই সময়ই প্রথম ব্যবহৃত হয় “Artificial Intelligence” শব্দটি।
এই সম্মেলনে ছিলেন:
John McCarthy (AI-এর গডফাদার)
Marvin Minsky
Claude Shannon
Nathaniel Rochester
AI তখন আর শুধু কল্পনা ছিল না—এবার শুরু হলো সত্যিকারের গবেষণা।
তবে সব স্বপ্ন সহজে পূর্ণ হয় না।
৬০–৭০’র দশকে AI নিয়ে অনেক গবেষণা হয়, কিন্তু প্রযুক্তি তখনো দুর্বল। কম্পিউটার ছিল স্লো, ডেটা ছিল সীমিত। ফলে অনেক গবেষণা ব্যর্থ হয়।
সরকার ও পৃষ্ঠপোষকেরা তহবিল বন্ধ করে দেয়।
এই সময়কে বলা হয় “AI Winter”—যেখানে AI হয়ে ওঠে “ভবিষ্যতের মিথ”।
AI আবার ঘুরে দাঁড়ায়।
১৯৯৭ সালে, IBM-এর তৈরি Deep Blue দাবা খেলায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন Gary Kasparov–কে হারিয়ে দেয়। এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে AI-কে নতুন আলোয় নিয়ে আসে।
তারপর আসে ইন্টারনেট, মোবাইল, এবং ডেটার বিস্ফোরণ।
শুরু হয় Machine Learning–এর যুগ, যেখানে মেশিন নিজে থেকে শিখতে শুরু করে।
এরই পরিণতি Deep Learning—যেখানে মেশিনের মধ্যে তৈরি হয় মানুষের মস্তিষ্কের মতো Neural Network। এখন মেশিন শুধু কাজ করে না, চিন্তাও করে।
আমরা এখন এক Generative AI যুগে বাস করছি।
AI এখন শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করে না, নিজে কনটেন্ট তৈরি করে।
ChatGPT আপনার গল্প লেখে
Midjourney চিত্র আঁকে
DALL·E আপনার কল্পনাকে রঙে রূপ দেয়
Sora AI স্ক্রিপ্ট থেকে ভিডিও বানিয়ে দেয়
AI এখন মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী না সহকারী—এই প্রশ্নটিই সামনে এসেছে।
AI এর ইতিহাস আসলে শুধু প্রযুক্তির ইতিহাস নয়। এটি একটি মানুষের সাহসী কল্পনার ইতিহাস—যেখানে একটি প্রশ্ন (“Can machines think?”) আজ আমাদের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা এখন এক দ্বিধা-দোলাচলে আছি—AI কি আমাদের সহায়ক হবে, নাকি আমাদের চাকরি কেড়ে নেবে?
উত্তর সময়ই বলবে।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না—
AI কি আমাদের বন্ধু, না প্রতিদ্বন্দ্বী?
AI দিয়ে কীভাবে ইনকাম করা যায়?
না কি AI আমাদের চাকরি নেবে?
কমেন্টে জানান, আমরা খুলবো পরবর্তী Unknown Vault।
ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন, এবং ব্লগে সাবস্ক্রাইব করুন যেন পরবর্তী AI সম্পর্কিত কনটেন্ট মিস না হয়।
AI History, Alan Turing,Generative AI
, Deep Learning
, Machine Learning
, ChatGPT
, Bangla Blog