The Unknown Vault

কমলা রোদের বাঁশি

কবিতা: কমলা রোদের বাঁশি
কবি : বেদত্রয়ী ( রিমি মন্ডল )

তোর জানলার দিকে রোজ হাঁ করে তাকিয়ে থাকা বাউন্ডুলে ছেলেটা আজ আসেনি।কালকেও আসেনি হয়তো!তুই এসব কিছুই দেখিস না, ভাবিসও না।

তোর ভাববার বা দেখবার সময় কই !

কিন্তু যে রোজ দেখে,

রোজ আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকে তোর জন্য প্রতিক্ষা করা ওই বাউন্ডুলে ছেলেটার দিকে!

সে খবর কী আর কেউ রাখে!

সে খবর আছে শুধু –

ওই নীরব জানলার কড়িবরগার কাছে।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার একটা নাম ছিল!

কি যেন বলে ডেকেছিল ওকে সেদিন –

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে থাকা একদল ছেলে!

রোদ্দুর ?

যে মেয়েটি রোজ যত্ন করে তোর স্নানের জল গরম দেয়, 

যত্ন করে খাবার রেঁধে সাজিয়ে রাখে খাবার টেবিলে;

যে মেয়েটি রোজ পা না টিপে দিলে তোর কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না !

সে মেয়েটি আজকাল তোর বিছানা গোছাতে গোছাতে গুনগুনিয়ে ওঠে –

ঘোরেতে ভ্রমর এল্লো গুনগুনিয়ে।

মেয়েটির গ্রামের নাম কারো জানা নেই।

মেয়েটি অনাথ।

মেয়েটির চোখ দুটো ভারি চঞ্চল।

মেয়েটির ডাক নাম কমলা।

আজকাল তোর বাদ দেওয়া পুরনো খাতার পিছনে সে তার পুরো নাম লেখা শিখছে – “কমলাসুন্দরী”

আঁকাবাঁকা নদীর মতোই সুন্দর “কমলাসুন্দরী”।

রাস্তার দিকের জানলার নীচে ছেঁড়া ছেঁড়া কাগজের স্তূপ জমছে,

সেও তোর অজানা।

কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে শহর জুড়ে।

মেয়েটি কাল সারারাত জানলা খুলে বাইরে হাত বাড়িয়ে বসেছিল।

কি জানি কি চাইছিল !

কাগজের স্তূপে সবুজ রঙের কিছু একটা আটকে আছে সকাল থেকে। 

কাল রাতের বৃষ্টির জলে ভেসে এসেছে হয়তো !

মেয়েটি নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসে।

সদর দরজা খুলে এগিয়ে যায় জানলার নীচটার দিকে।

কাগজের স্তূপ থেকে তুলে নেয় জিনিসটা।

হঠাত্ একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে আসে কমলার কাছে।

এটা আমার খেলার বাঁশি।

হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কোথায় যে উধাও হয়ে যায়!

কমলা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে।

বৃষ্টি থামলে কমলা আজ ওই কাগজগুলো ঝাটঁ দিয়ে পরিষ্কার করে ডাস্টবিনে ফেলে দেবে,

সে মনে মনে ঠিক করে রাখে।

কিন্তু বৃষ্টি আজকেও থামছে না।

আজও বোধ হয় সারারাত!

বিকেলে বৃষ্টি থামলে সেই ছেলেটি আবার এসে দাঁড়ায়। 

পুরো তিনদিন সে আসেনি। 

হিসেব যে রাখার সে ঠিকই রাখছিল।

আজ ছেলেটি নীল রঙের জামা পড়ে এসেছে।

পায়ে নীল চপ্পল।

ছেলেটির চশমার কাঁচটা আজ ঘোলাটে লাগছে, 

হয়তো জল লেগেছে।

ছেলেটির কাঁধের ঝোলা ব্যাগে আজকেও বাঁশিটা উঁকি মারছে রোজকার মতো।

কমলা আজও আড়াল থেকে সবটা দেখছে।

                                                                                ✍️বেদত্রয়ী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top